সিলেটের আল হারামাইন হাসপাতালে চিকিৎসার অবহেলায় এক বৃদ্ধের মৃত্যুর অভিযোগ করেছেন তার কন্যা ডা. নুরিয়া জাহান কেয়া। তিনি বলেন, তার পিতা ৬৯ বছর বয়সী বেদার আহমেদকে ভুল ইনসুলিন ডোজ দেয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতাল থেকে দেয়া মৃত্যুর সার্টিফিকেটেও সত্য গোপন করা হয়েছে বলেও জানান। গতকাল সিলেট প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন ওসমানীনগরের সাদিপুর ইব্রাহিমপুরের বাসিন্দা ডা. নুরিয়া জাহান কেয়া। লিখিত বক্তব্যে ওই চিকিৎসক জানান, তার পিতা পন্টাইন ইনফার্কশন থেকে সুস্থতার দিকে যাচ্ছিলেন। নর্থ ইস্ট ও মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে সম্পূর্ণ স্থিতিশীল অবস্থায় ছিলেন। মাউন্ট এডোরা থেকে বাসায় যাওয়ার পরদিন বমি হয় এবং কাশি বেড়ে যায়। তাই আল হারামাইন হাসপাতালে ডা. রাহাত আমিন চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে ভর্তি করা হয়। ডা. কেয়া অভিযোগ করে বলেন, আল হারামাইনে ভর্তির সময় তার বাবার খাওয়া-দাওয়া স্বাভাবিক ছিল। সে সময় এনজিও করা লাগেনি। ১৩ই নভেম্বর সকালে এফবিএস ছিল ৭.১। তিনি তার বোনকে বলেছিলেন ওইদিন সকালে সিস্টারকে বলতে যাতে তার বাবাকে ইনসুলিন না দেন। কিন্তু এফবিএস ৭.১ হওয়া পরও নার্স কাউকে না জিজ্ঞাস করেই ১৬ ইউনিট ইনসুলিন দিয়ে দেয়। কোনো ডাক্তারকে না জানিয়ে ও রোগীর অবস্থার মূল্যায়ন না করেই ইনসুলিন দেয়ার পর এটাই নিয়ম বলে জানায় ওই নার্স। ইনসুলিন দেয়ার পর আরবিএস নেমে যায় ৩.১-এ।
এরপর নার্স চেক করলেও বিষয়টি আমাদের অবগত করা হয়নি কিংবা কোনো ডাক্তারকেও জানানো হয়েছে কিনা আমরা জানি না। তবে এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। তার বোন একজন মেডিকেল অফিসারকে বিষয়টি জানালে তখন আরবিএস চেক করে ডেক্সট্রোজ দেয়া হয়। পরদিন ভোর ৪টায় হ্যালোপেরিডল দেয়া হয় কোনো মনিটরিং ছাড়াই। শেষ মুহূর্তে ভুল পদ্ধতিতে সাকশন করা হয়। পাল্্স অক্সিমিটার ২ চেক না করেই এবং অক্সিজেন না দিয়ে এমনকি সেচুরেশন না দেখে, এয়ারওয়ে সুরক্ষিত না করেই নার্স সাকশন করে। সঙ্গে একজন মেডিকেল অফিসার থাকা সত্ত্বেও তিনি ০২ লেভেল দেখার দরকার মনে করেননি। ১০ সেকেন্ডের মধ্যে সাইনোসিস দেখা দেয়।
তখন নার্স দৌড়ে গিয়ে পাল্্স অক্সিমিটার নিয়ে আসে। কিন্তু এর আগেই আমার পিতা মারা যান। মৃত্যুর সার্টিফিকেটে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার উল্লেখ নেই। আরবিএস ৩.১ থাকা সত্ত্বেও ডেথ সার্টিফিকেটে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার উল্লেখ করা হয়নি। এটি সত্য গোপন করার চেষ্টা বলে উল্লেখ করেন ডা. কেয়া। সংবাদ সম্মেলনে ডা. নুরিয়া জাহান কেয়া বলেন, নিজে একজন চিকিৎসক হয়েও হেরে গেলাম এই অবহেলার কাছে। তিনি হাসপাতাল থেকে তার পিতার চিকিৎসার ফাইলের কপি আনতে দরখাস্ত করেছেন বলে জানান। বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ডিজিএইচএস ও বিএমডিসি কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। একইসঙ্গে তিনি আল হারামাইন হাসপাতালে ডা. রাহাত আমিন চৌধুরী ও নার্সসহ সংশ্লিষ্ট স্টাফদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনের নিহত বেদার আহমদের স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।